সিরাজদিখানে জীবন বাচাঁতে ৪ পরিবার গ্রাম ছাড়া : পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক !

শেখ মোহাম্মদ রতন :

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

এতে করে ৪ পরিবারের ২৪ সদস্যের মধ্যে ২৩ জন সদস্য জীবন বাচাঁতে অন্যগ্রামে স্বজনদের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছে।

বাকি একজন প্রবাসে রয়েছে।

এসব ঘটনার কারনে মেয়ের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার প্রস্তুতি থাকলেও অনুষ্ঠান করতে পারেনি একটি পরিবার।

এসব ঘটনা জানার পরও থানায় গিয়ে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিরাজদিখান থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার লতব্দি ইউনিয়নের নতুন ভাষানচর গ্রামে।

ঘটনাটি ঘটিয়েছে উক্ত গ্রামের মৃত ধলু মীরের ছেলে আব্দুল হামিদ মীর রোকন ও হযরত মীরের নেতৃত্বে তাদের লোকজন।

অমানবিক এ নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে একই গ্রামের মরহুম হাজী আহমেদ আলী মাস্টারের ৪ ছেলে মোঃ মাজেদ, হাফেজ মোঃ ওয়াজেদ, মাওলানা মোঃ জামিল হোসেন ও হাজী মোঃ জহির হোসেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় টিনের ঘরের বেড়া, বিল্ডিংয়ের দড়জা জানালা ও ৪টি বাড়ির তিনটি ঘরের আসবাবপত্র, রিফ্্িরজারেশন, শুকেস, আলমিরাসহ প্লেট হাড়ি ভাঙচুর অবস্থায় পরে আছে।

মাজেদ এর স্ত্রী শাহিনা বেগম ও ওয়াজেদ স্ত্রী নাজমা বেগম ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই, পুরুষ শুন্য হয়ে পরেছে।

শাহিনা বেগম ও নাজমা বেগম জানান, বুধবার ভোরে রোকন মীর তার লোকজন নিয়ে আমাদের জমির মাটি কেটে পুকুর বানাচ্ছে। মাজেদ বাধা দিলে তাকে রোকন মীরের লোকজন মারধর করে এ নিয়ে ঝগড়া হয়।

এর পর রোকন মীর ও হযরত মীরের লোকজন সকাল ৯ টার দিকে আমাদের বাড়ি-ঘরে হামলা করে জিনিস পত্র ভাঙচুর ও অনেক মালমাল লুট করে নিয়ে যায়।

তাদের শতাধিক লোকজন দেশীয় অস্ত্র টেটা, দা, ছেনি, শাবলসহ বাড়িতে হামলা করলে ভয়ে আমরা শিশু ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে জীবন বাচাঁতে অন্যগ্রামে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নেই।

ঐ দিন বুধবার দুপুরে লতব্দী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনকে দেবর হাজী জহির ঘটনাটি জানালে তিনি বিচারের আশ^াস দেন। সে সময় বাড়িতে আবার হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তখন আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। এলাকার লোকজন আমাদের জানায়।

এরপর চেযারম্যানকে জানালে সে বসিয়ে রাখে আর রোকন মীরের লোকজন ২ ঘন্টা ব্যাপী তান্ডব চালিয়ে আমাদের ২০/২২ লাখ টাকার ক্ষতি করে।

চেয়ারম্যান শুক্রবার মিমাংশা করবে বলেছিল। পরে চেয়ারম্যানের বাড়িতে থাকা অবস্থায় বাড়িতে আবার হামলা করে, তাছাড়া শুক্রবার মাওলানা জামিল হোসেনের মেয়ের বিয়ের দিন ধার্য্য ছিল। তাই আমরা শুক্রবার মিমাংশার তারিখ বাদ দিয়ে থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে গেলে সিরাজদিখান থানা-পুলিশ জানায় চেয়ারম্যান এর মিমাংশা করবে।

এ কারনে অভিযোগ নেয় নাই। আমরা আতঙ্কে আছি তারা আমাদের গ্রামে আসলে মেরে ফেলার হুমকী দিয়েছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিয়ের গরুসহ খরচের সব কিছু কেনা ছিল একদিন আগেই হামলা করে এতবড় ক্ষতি করল।

দেবরের মেয়েকে তার নানা বাড়ি নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ি-ঘর হাস, মুরগী, গরু ছাগল ফেলে আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি।

আমরা কি মানুষ না? আমরা কি এর সমাধান পাব না? তারা দুজন এ কথা বলে কেঁেদ ফেলেন।

শাহিনা বেগম আরো বলেন বিভিন্ন ঘরে টাকা ও মুল্যবান জিনিসিপত্র ছিল কিছুই নাই, সব কিছু লুট করে নিয়েছে। আর ঘরের সকল জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলেছে।

আব্দুল হামিদ মীর রোকন জানান, ওড়া আমার আত্বীয় ওদের কত ধরনের উপকার করেছি। কিন্ত মাজেদ ওয়াজেদ ওদেরকে ১২ লাখ টাকায় আমি ২২ শতাংশের একটা পুকুর লিখে দিয়েছি।

তার পাশেই আমার আরো জমি রয়েছে। ওদেরকে জমি মেপে নিতে বলেছি ওড়া না মেপে আমার আরো জমি বেশি ব্যবহার করছে। আমি ১৫ ফুট জমি কম পেয়েছি।

এ নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক ৫ বছর মিমাংশার চেষ্টা করে। তারা মিমাংশায় বসলে মানে, পরে এসে আর মানে না।

বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের সাথে তারা কথা দিয়ে আসে এরপর আর কার্যকর করে না।

এলাকার মাদবরদের সাথে তারা এ কাজই করেছে। তাই আমার জমিতে বুধবার ভোরে আমি কাজ করতে গেলে মাজেদসহ ৭/৮জন আমার উপর হামলা করে।

আমার লোকজন এ খবর পেয়ে তার বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর করে।

লতব্দী ইউপি চেয়ারম্যান এস,এম, সোহরাব হোসেন বাড়ি-ঘর ভাঙচুরের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, রোকন মীরকে মারধর করার পর তার লোকজন ভাঙচুর করেছে বিষয়টি জেনেই আমি শুক্রবার দু’পক্ষকে মিমাংসার জন্য তারিখ নির্ধারন করলে মাজেদ মোল্লা বিচারে আসবে না বলে জানায় ।

এ প্রসঙ্গে সিরাজদিখান থানার ওসি মোঃ আবুল কালাম জানান, বিষয়টি আমি অবগত, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিষয়টি মিমাংশ করবে বলে আমাকে জানিয়েছে। মাজেদ মোল্লা পালিয়ে বেড়াচ্ছে এ কথা আমার জানা নেই। অভিযোগ দিতে কেউ থানায় আসেনি।

 

শেখ মোহাম্মদ রতন / ০১৮১৮৩৩৬৮০৮ / ০৭-০৪-১৮ / সমকালীন মুন্সীগঞ্জ