মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল দূর্নীতি ও অনিয়মের বেড়াজালে হ-য-ব-র-ল-অবস্থা

শেখ মোহাম্মদ রতন, সমকালীন মুন্সীগঞ্জ :

নানা অনিয়ম ও দূনীর্তির বেড়াজালে মুন্সীগঞ্জের ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নিত করা হলেও জেনারেল হাসপাতালটির এখন নাজুক ও হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে।

বর্তমান সিভিল সার্জন মো: হাবিবুর রহমানের নির্দেশ থাকা সত্তেও ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের মোটা টাকায় পকেট ভারি করে মুখ বন্ধ করে রেখেছে জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স ও কর্মচারিরা।

তাই প্রকাশ্যেই প্রতিদিনই দেখা যায় জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত ইনডোর ও আউটডোরের পালিত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত পরিক্ষা করার জন্য রোগী টানা হেচরাকারি দালালদের।

স্থানীয় বর্তমানে হাসপাতালের ভিতরের প্রতিটি ডাক্তারের রুমে দেখা যায় লাল-নীল-হলুদ রংয়ের বোরখা পড়া নারী দালালদের।

আর খোদ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা এখন পুরুষ দালালদের ভূমিকা রাখছেন। এ হাসপাতালটির প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ইনডোর ও আউটডোরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব দালালদের জন্য ভিতরে প্রবেশ করা মুশকিল হয়ে পরেছে সাধারণ রোগীরা।

ভর্তিকৃত রোগীদের সাথে নার্স আয়াদের দুর্ব্যাবহারে নাজেহাল হয়ে পরেছে রোগীরা। ঔষুধ-পথ্য না পাওয়ার অভিযোগ করছেন ভর্তিকৃত রোগীরা। ডিউটি ডাক্তাররা রোগী না দেখে ওষুধ কোম্পানী ও ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারের দালালদের সাথে খোস-গল্প ও লাল নীল খামে ভরা উপঢৌকন নেয়া নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে দেখা গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন হাসপাতালে আগত আউটডোর ও ইনডোরের রোগীরা।

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ডাক্তার থেকে শুরু করে ওষুধ, লোকবল, পানির টিউবওয়েল শূন্য থাকার কারণে হাসপাতালটি যেমন খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে। এতে গরিব অসহায় রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বর্হিবিভাগের মেডিকেল অফিসারদের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমানে ডাক্তার নেই বলে রোগীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দারিয়ে থাকতে হয়।

এখানে আগত চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দিকে খেয়াল করার যেনো কেউ নেই। এসব অব্যবস্থাপনার কারনে অনেক রোগীকে তার স্বজনরা হাসপাতাল থেকে বাধ্য হয়ে দালালদের প্ররোচনায় পরে নিয়ে যায় বেসরকারি ক্লিনিকে।
হাসপাতালের কেবিনসহ জেনারেল বেডের বাথরুম সবকটিই অপরিষ্কার, টয়লেট নষ্ট ও পানির কল না থাকায় আরও বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগীদের।

বাহিরের টিউবওয়েল দুটি বিকল থাকায় রোগীরা খাবারের পানিও বাহিরে থেকে কিনে খেতে হচ্ছে।

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে ইনডোরের ৪ টি ওয়ার্ডে ১০০ বেড থাকার কথা থাকলেও সর্বসাকুল্যে বেড আছে ৮৬ টা বাকি ১৬ টাই হাসপাতাল থেকে গায়েব হয়ে গেছে।

আর যে ৮৬ টা বেডগুলো আছে তার অধিকাংশই ভাঙ্গা এবং যেসব বেডগুলো কোন রকম ঠিক আছে, তার আবার বিছানা নেই। নেই শিতের কম্বল ও মশারি। যার কারণে রোগীদের বেডে শুতে অসুবিধা হয়। বেডের অভাবে রোগীদের ফ্লোরে থাকতে হয় নিজস্ব বিছানা পেতে।

কলেরা রোগীদের কোন ওষুধ নাই , সাপে কাটা রুগীদের কোন এন্টিভেনাম নাই।

জনবলের অভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাও সঠিক ভাবে হয়না। ওয়ার্ডের লাইট ও ফ্যান নষ্ট। এতে হাসপাতালের ভেতরের অধিকাংশ জায়গাই অন্ধকারে থাকে। নাই কোন দারোয়ান-পাহারাদার। হাসপাতালটার দিকে তাকালে মনে হয় সে নিজেই রোগী। উন্নতি হয়নি আউটডোর-ইনডোর।

ওষুধ কোম্পানি ও ক্লিনিক দালালরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডাক্তারের পাশে থেকে রোগী টানা হেচঁরা করছে। ওষুধ কোম্পানির (ফুড সাপ্লিমেন্ট) দালালরা ইমারজেন্সি সহ ইনডোরে সকাল-রাতঅব্দি ডাক্তার নার্সদের সাথে থেকে হলুদ খামের উপঢৌকন দিয়ে তাদের নাম বিহীন ওষুধ লেখাচ্ছেন। যা এখন যেন দেখার কেও নেই। কারণ ডাক্তার-নার্সরা এখন নিজেরাই তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন।

এদিকে, হাসপাতালের ডেলিভারী বিভাগের দায়ীত্বে থাকা সিনিয়র নার্স-(ইনচার্জ) প্রসব ব্যাথা নিয়ে আসা প্রতিটি রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।

অনেকে ক্ষমতাশিন দলের প্রভাব খাটিয়ে চাকরি করতে আসা সকল সিভিল সার্জনকে ম্যানেজ করে দির্ঘ বছর যাবৎ এ হাসপাতালে দিব্বি চাকরি করে যাচ্ছে। হামলা-মামলার ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করে না।

হাসপাতালের আবাসিক ম্যাডিকেল অফিসার-(আর এম ও) মো: সাখাওয়াত হোসেন জানান, ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে ১০০ শয্যা-বিশিষ্ঠ হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। তাই প্রশাসনিক কাজে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। জেনারেল হাসপাতালে এখন অনেক অনিয়ম চলছে।
ডেলিভারী বিভাগের দায়ীত্বে থাকা সিনিয়র নার্স-(ইনচার্জ) প্রসব ব্যাথা নিয়ে আসা প্রতিটি রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন প্রকার অনিয়মের ছাড় দেয়া হবে না।
এদিকে দালারদের দৌড়াত্ব বেড়েই চলছে। হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের দায়ীত্ব দেয়া হয়েছিল দালালদের ভিতরে প্রবেশ করতে না দিতে। তারা এখন সম্পূর্ন ব্যর্থ। ওষুধ কোম্পানির কোন দালাররা যেন ডাক্তার-নার্সরা আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয় সে ব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার মালিকদের অবগত করা হয়েছে।