মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে বিএনপির সভাপতি রিপন মল্লীকের বহিস্কারের দাবিতে মানববন্ধন

সমকালীন মুন্সীগঞ্জ ডেক্সঃ

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেল বিএনপির সভাপতি আলী আজগর রিপন মল্লিকের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ,অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, বিগত নির্বাচন গুলোতে আওয়ামীলিগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করা, নিজ দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন লোকদের বিএনপিতে ভেড়ানো ও দলীয় পদ পদবী বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এসব কর্মকান্ডের জন্য
রিপন মল্লীকের বহিস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত দিকে মুন্সীগঞ্জ প্রসক্লাবের সামনের সড়কে উপজেলা বিএনপির ত্যাগী নেতা কর্মীদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় নারী-পুরুষরা অংশ নেন।

মানববন্ধনকারীরা বলেন, রিপন মল্লীক বিএনপির পদ ভাঙিয়ে একের পর এক অপ কর্ম করে যাচ্ছেন। হিন্দু পরিবারের সম্পদ দখল। পদ বানিজ্য, মামলা বানিজ্য,টঙ্গিবাড়ী উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা নদী থেকে প্রতি রাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন।কেউ প্রতিবাদ করলেই রিপন মল্লীক তার লোকজন দিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

এসব অপকর্মের জন্য বিএনপির প্রতি মানুষের আক্ষেপ বাড়ছে। তাই দল থেকে রিপন মল্লীকে বহিস্কারসহ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন মানববন্ধনকারীরা।

কেন্দ্রীয় তাতী দলের যুগ্ম আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন আশিক এ দিন মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে বলেন, বালু উত্তোলনে পরোক্ষভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রিপন মল্লীক। বালু উত্তোলনের ফলে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় বাজার, মূলচর, সরিসাবন, ছাতকের চর প্রতিদিন একটু একটু করে নদীতে বিলীন হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা মনোনায়ন দাখিলের দিন রিপন মল্লীক তাঁর লোকজন দিয়ে প্রার্থী ও দলীয় কর্মীদের ওপর আক্রমন করেন। সে ঘটনায় উল্টো রিপন মল্লীক তার ভাতিজা হান্নান মল্লিককে বাদি করে মিজানুর রহমান সিনহাসহ অসংখ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় বিএনপির অনেক নেতাকে জেল পর্যন্ত খাটতে হয়।

২০১১ সালে মুন্সীগঞ্জ জুটিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। সে মামলার স্বাক্ষী ছিলেন জেলা আওয়ামীলিগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কাজী ওয়াহিদ। মিথ্যা মামলার স্বাক্ষী হওয়ার পরেও চলতি বছরের ২১শে মে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলিগ প্রার্থী কাজী ওয়াহিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে রিপন মল্লীক ও তার লোকজন কাজী ওয়াহিদের পক্ষে নির্বাচন করেন।

এদিন কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল আলিম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ সেলিম মোল্লা, কোকো সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেনসহ মহিলা দল, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

মানববন্ধনে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল আলিম অভিযোগ করে বলেন, ২০১৮ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে রিপন মল্লিক আওয়ামীলিগ প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিনের পক্ষে নির্বাচন করেন।বিভিন্ন ইউনিয়নের আওয়ামীলিগের নেতা কর্মীদের অর্থের বিনিময়ে বিএনপিতে যোগদান করিয়েছেন। মো. মতিউর রহমান শিকদার নামে এক ব্যক্তি গত ৩ বছর যাবত আমেরিকাতে বসবাস করছেন। অথচ মতিউরের কাছ থেকে রিপন মল্লিক মোটা অংকের টাকা নিয়ে গত বছর উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বানান।
এছাড়াও এমন অনেক ইউনিয়ন রয়েছে, যেখানে অযোগ্য অশিক্ষিত লোক দিয়ে রিপন মল্লীক অর্থের বিনিময়ে কমিটি গঠন করেছেন। যাহা দলের জন্য ভীষন ক্ষতিকর। রিপন মল্লীকের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

এসময় মানববন্ধনকারীরা, সরজমিন তদন্ত করে রিপন মল্লীকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা এবং দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আলী আজগর রিপন মল্লিক বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ করা হয়েছে সবগুলোই ভিত্তিহীন, বানোয়াট, মিথ্যা। এসব অভিযোগের একটির কেউ কোন প্রমাণ দিতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা
অভিযোগ তুলেছে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২ জুলাই, ৮ সেপ্টেম্বর ও ২ অক্টোবর মাসের শুরুতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে তিনদফা লিখিত অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের অনুলিপি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবন এড. রুহুল কবির রিজভী আহাম্মেদ এবং মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর দেওয়া হয়।