পদ্মা সেতুর কাজ শুরু সেপ্টেম্বরে, শেষ ডিসেম্বরে

সমকালীন মুন্সীগঞ্জ ডেক্স, ২০ আগষ্ট ২০২০:
নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের গতি। ৩১টি স্প্যান বসানো হয়ে গেছে। ৪২টি খুঁটির ওপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। বাকি ১০টি স্প্যান এখন মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে রয়েছে। বর্তমানে সাতটি স্প্যান তৈরি শেষ হয়েছে এবং বাকি ৩টির কাজ চলছে। তবে স্প্যান প্রস্তুত থাকলেও তা বসানো যাচ্ছে না।

এদিকে চলতি মাসে অবস্থার আর উন্নতি হবে না বলে মনে করছেন প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা। তবে সেপ্টেম্বরে নির্মাণকাজে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসবে বলে আশা করছেন সেতুর প্রকৌশলীরা।

আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অন্তত পাঁচটি স্প্যান খুঁটির ওপর বসানোর লক্ষ্য ছিল কর্তৃপক্ষের। তবে মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় এ সময়ে একটি স্প্যানও বসানো সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া পদ্মার নজিরবিহীন ভাঙনেও কাজের ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি এখন ৮৯ শতাংশ। মূল সেতুতে এরই মধ্যে ৩১টি স্প্যান বসানো হয়ে গেছে। ৪২টি খুঁটির ওপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। বাকি ১০টি স্প্যান এখন মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে রয়েছে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

তিনি জানান, পদ্মা নদীর প্রতিকূল ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে কাজের গতি অনেক কমেছে। তবে আগামী বছর পদ্মা সেতু চালু করতে যে দিনক্ষণ নির্ধারণ রয়েছে, তা বাস্তবায়নে কর্মযজ্ঞ অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি স্প্যানগুলো বসানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের জানান, মূল সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সূত্রমতে, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সর্বোচ্চ গতিতে চালানো গেলে প্রতি মাসে তিনটি স্প্যান বসানো যাবে।

এ পর্যন্ত সেতুর শরিয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩১ স্প্যান বসানোর পর মূল অবয়ব দৃশ্যমান হয়েছে চার হাজার ৬৫০ মিটার। ইতোমধ্যে শরিয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের সব স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন মাওয়া প্রান্তে থাকা ৯টি খুঁটির ওপর ১০টি স্প্যান স্থাপনের কাজ শেষ হলেই ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হবে।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, গত ৩১ জুলাই দুপুর ২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে পদ্মায় তীব্র স্রোত আকস্মিক ভাঙন আঘাত হানে। ভাঙনের কারণে এসময় ১৯২টি রেলওয়ে স্টিল স্ট্রিন্জার (৪ টি একত্রে ৪৮ সেট) এবং ১২৬টি (পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত ১টি সহ) রোডওয়ে স্ল্যাব নদীতে পতিত হয়। পরবর্তী সময়ে ওই এলাকা থেকে সব মালামাল ইতোমধ্যে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার কয়েকদিন আগেও সেখানে সার্ভে করে ভাঙনের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। সেখানে নিয়োজিত ঠিকাদার আকস্মিক এ ভাঙনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৯২টি রেলওয়ে স্ট্রিন্জার (গার্ডার) ইতোমধ্যে লুক্সেমবার্গ এ তৈরির জন্য অর্ডার দিয়েছে। স্ট্রিন্জার/গার্ডারসমূহ তৈরিতে ৩ মাস ও শিপিং এ একমাস সময় লাগবে।

তাছাড়াও যে সব স্ট্রিন্জার নদীতে পড়েছে সেগুলো উদ্ধার কাজ পানি কমলেই শুরু করা হবে। সময় যাতে কোনো অপচয় না হয় এ বিষয় মাথায় রেখেই ঠিকাদার পুরো ১৯২টি স্ট্রিন্জারই অর্ডার দিয়েছে। যে সব স্ট্রিন্জার নদী থেকে পাওয়া যাবে সেগুলোও ব্যবহার উপযোগী থাকলে ব্যবহার করা হতে পারে। তাছাড়াও ১২৬টি রোডওয়ে স্ল্যাব তৈরির কাজও ঠিকাদার হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে ৫টি স্ল্যাব তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সব তৈরি করা সম্ভব হবে।

সেতুর মোট ২৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ৮৭০টি, ২৯৫৯ রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১৪০০টি এবং ৪৩৮টি ভায়াডাক্ট গার্ডারের মধ্যে ১৯৫টি স্থাপন করা হয়েছে। মূল সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩১টি স্থাপন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১০টি স্প্যান মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে রয়েছে। যার মধ্যে ৭টি স্প্যান তৈরি সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি ৩টি স্প্যানের কাজ চলমান রয়েছে। পানি কমতে শুরু করলে সেপ্টেম্বর ১৫ তারিখের পর স্প্যান স্থাপন শুরু করা হবে। আশা করা যাচ্ছে, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সব স্প্যান স্থাপন সম্ভব হবে।

পদ্মা সেতুটি ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল হবে। যার ওপর দিয়ে সড়কপথ ও নিচের অংশে থাকবে রেলপথ। সেতুর এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব প্রায় ১৫০ মিটার। একেকটি খুঁটি ৫০ হাজার টন লোড নিতে সক্ষম। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূলসেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের ‘সিনো হাইড্রো করপোরেশন।