দুর্নীতিতে ২০১৭-এর তুলনায় এবার বাংলাদেশের অবস্থান দুই ধাপ এগিয়েছে : সরকারের প্রতি কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান-টিআইবির

শেখ মোহাম্মদ রতন, সমকালীন মুন্সীগঞ্জ ডেক্স :

বার্লিন ভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০১৭ অনুযায়ী ২০১৬ সালের তুলনায় বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান দুই ধাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবেএ সামান্য অগ্রগতিবৈশ্বিক গড় স্কোর ৪৩ এরতুলনায় এখনো অনেক কম, অর্থাৎদুর্নীতির ব্যাপকতা এখনো উদ্বেগ জনক বলে প্রতীয়মান হয়।

এই প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ পবিশেষকেরা রাজনৈতিক সদিচ্ছা, কার্যকর দুদক এবং গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে জোরালো জানিয়েছে ।

বৃৃহস্পতিবার সকালে সিপিআই ২০১৭এর বৈশ্বিক প্রকাশ উপলক্ষে ধানম-িস্থ টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের এই অবস্থান প্রকাশ করেটি আইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, ‘‘২০১৭ সালে বাংলাদেশ ০-১০০ স্কেলে ও অবস্থান উভয় বিবেচনায় ২০১৬ এর তুলনায় ২ ধাপএগিয়েছে।

১০০ এরমধ্যে ৪৩ স্কোরকে গড় স্কোর হিসেবে বিবেচনায় বাংলাদেশের ২০১৭ সালের স্কোর ২৮ হওয়ায় দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনো উদ্বেগজনক বলে প্রতীয়মান হয়।

তদুপরি দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো বিব্রতকর ভাবে আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বনি¤œ।

এশিয়াপ্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি দেশেরমধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ সর্বনিন্ম অবস্থানে।

অতএব, উল্লিখিতসামান্য অগ্রগতি কোনো অবস্থাতেই সন্তোষজনক নয়।

তবেঅনুমানকরাযায় যে, বাংলাদেশেরআইনী, প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিকাঠামো তুলনামূলক ভাবে সুদৃঢ় তর হয়েছে এই ধারণা থেকে সূচকে বাংলাদেশের স্কোর দুই বৃদ্ধি পেয়েছে।

কিন্তু প্রয়োগের ঘাটতি, ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিকখাত সহ বিভিন্নখাতে ক্রমবর্ধমান অনৈতিক প্রভাব বিস্তার, অনিয়ম ও দুর্নীতি ও বিশৃংখলায় জড়িত সহায়তাকারী ও দায়ীদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিচারের আওতা তথা জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সফল হতে না পারায় আমরা আরো ভালো করতে পারিনি।”

সিপিআই ২০১৭ অনুযায়ী ৮৯ স্কোর পেয়ে কম দুর্নীতি গ্রস্ততালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে নিউজিল্যান্ড।

৮৮ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডেনমার্ক; এবংতৃতীয় স্থানে যৌথ ভাবে রয়েছে ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড যাদের স্কোর ৮৫।

৯ স্কোর পেয়ে ২০১৭ সালেতালিকার সর্বনি¤েœ অবস্থান করছে সোমালিয়া।

১২ স্কোর পেয়ে তালিকার নি¤œক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিন সুদান এবং ১৪ স্কোর পেয়ে তৃতীয় সর্বনি¤œ অবস্থানে রয়েছে সিরিয়া।
এবছর একই স্কোর পেয়েবাংলাদেশের সাথে তালিকারনি¤œক্রমঅনুযায়ীসতেরতম অবস্থানে সম্মিলিতভাবেআরওরয়েছে গুয়াতেমালা, কেনিয়া, লেবানন ও মৌরিতানিয়া।

ড. জামান আরো বলেন‘‘টিআই কর্তৃক সিপিআই ২০১৭ ফলাফলে বিশ^ব্যাপী নাগরিক স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ার সাথে দুর্নীতিবৃদ্ধি পাওয়ার নিবিড় সম্পর্ক দেখা যায় যাবাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

দুর্নীতি মোকাবেলায় মুক্ত ও সক্রিয়নাগরিক সমাজ, অবাধগণমাধ্যম ও বেসরকারিসংস্থাসহজনগণেরজন্য সহায়ক ও অংশগ্রহণ মূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেন অগ্রযাত্রায় কেউ বাদ নাযায়।

একইসাথে টেকসইউন্নয়নলক্ষমাত্রা অর্জনে অগ্রাধিকারভিত্তিতেসরকারকেদুর্নীতিরবিরুদ্ধে জোরালো রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের পাশাপাশি জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে কোনধরনের প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীন ও কার্যকর ভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক দুর্নীতিপরিস্থিতির তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ২০১৭ সালের সিপিআই অনুযায়ী বৈশি^ক দুর্নীতিপরিস্থিতি আশংকাজনক।

সূচকঅনুযায়ী, বিশ^ব্যাপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লক্ষণীয় উদ্যোগ গ্রহণের পরও অধিকাংশ দেশ এর প্রচেষ্ঠার ক্ষেত্রে ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশেরঅধিক দেশ ৫০ এরনিচে স্কোর পেয়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে সকল দেশে গণমাধ্যম ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ (এনজিও) কম সুরক্ষা পেয়ে থাকে, সে সকল দেশে দুর্নীতি অধিকতর মাত্রায় বিদ্যমান।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৭ সালের সিপিআই অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোরমধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থানেরয়েছে ভুটান, যার স্কোর ৬৭ এবংউপরদিক থেকে অবস্থান ২৬।

এরপরের অবস্থানে রয়েছে ভারত, যার স্কোর ৪০ এবং অবস্থান ৮১। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোরমধ্যে এর পরে শ্রীলংকা ৩৮ স্কোর পেয়ে ৯১তম অবস্থানে রয়েছে।

৩৩ স্কোর পেয়ে ১১২ তম অবস্থানে এর পর রয়েছে মালদ্বীপ এবং ৩২ স্কোর পেয়ে ১১৭ তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান।
অন্যদিকে, ৩১ স্কোর পেয়ে ১২২তম অবস্থানে রয়েছে নেপাল।

এরপর রয়েছে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ এরপরে ১৫ স্কোর পেয়ে সূচকে চতুর্থ সর্বনি¤œ অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান।

উল্লেখ্য, সিপিআইএর ০-১০০ স্কেল এর ‘০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ‘১০০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্র¯ Íবাসর্বাধিক সুশাসিত বলে ধারণা করা হয়।

যে দেশ গুলোসূচকে অন্তর্ভুক্ত নয় তাদের সম্পর্কে এ সূচকে কোনো মন্তব্য করা হয় না।

সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোনো দেশই এখন পর্যন্ত শতভাগ স্কোর পায়নি। অর্থাৎ, দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বনি¤œ এমন দেশগুলোতেও কম মাত্রায়হলেও দুর্নীতি বিরাজ করে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয় যে, সিপি আই নির্ণয়ে টিআইবি কোনো ভূমিকা পালন করেনা।

এমনকিটিআইবি’রগবেষণা থেকে প্রাপ্ত কোনো তথ্য বাবিশ্লেষণসিপিআই-এ বিবেচিত হয় না।

পৃথিবীরঅন্যান্য দেশের টিআইচ্যাপ্টারের মতই টিআইবিও দুর্নীতির ধারণা সূচক দেশীয়পর্যায়ে প্রকাশ করে মাত্র।

যদিও দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ- সর্বোপরি, টেকসইউন্নয়নলক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে কঠিন তম অন্তরায়, তথাপি বাস্তবে দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতি গ্রস্ত নয়।

তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র।

ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি এবং তাপ্রতিরোধে দেশের নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহের ব্যর্থতার কারণে দুর্নীতির কার্যকর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছেনা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনটি আইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিনখান।

আরো উপস্থিত ছিলেনটি আইবি’র উপদেষ্টা – নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়াখায়ের।

২০১৭ সালের সিপিআই-এ ২০১৬-২০১৭ পর্যš সংগৃহীত তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে। সূচকের তথ্য সংগ্রহে মূলত চারটি ধাপ অনুসৃত হয়।

যেমন:- উপাত্তের উৎসনির্বাচন, পুনঃপরিমাপ, পুনঃপরিমাপকৃত উপাত্তের সমন্বয় এবং পরিমাপের যথার্থতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ।

জরিপগুলোতে মূলত ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, সংশ্লিষ্ট খাতের গবেষক ও বিশ্লেষক বৃন্দেরধারণার প্রতিফলন ঘটে থাকে।

উল্লেখ্য যে, টিআই এর বার্লিনস্থ সচিবালয়ের গবেষণা বিভাগ কর্তৃক সিপিআই প্রণীত হয়ে থাকে। কলম্বিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের স্ট্যাটিসটিকস ও পলিটিক্যালসায়েন্স বিভাগএবং ইতালিরমিলানস্থ বকনী বিশ^বিদ্যালয়ের পলিটিক্যালসায়েন্স বিভাগের বিশেষজ্ঞবৃন্দ কর্তৃক সিপিআই এর তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি বা মেথোডলজি প্রণীত হয়েছে।

এছাড়া সিপিআইএর স্কোর জার্মানীরহার্টি স্কুল অব ইকোনমিকরি সার্চ এবং মেক্সিকোরমনটেরেইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি এন্ড হায়ার এডুকেশনের বিশেষজ্ঞ কর্তৃক যাচাইকৃত।

সিপিআই ২০১৭এরজন্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তথ্য সূত্র হিসেবে ৮টি জরিপ ব্যবহৃত হয়েছে।

জরিপগুলোহলো:- বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসিঅ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট ২০১৭, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে ২০১৭, গ্লোবালইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস্ ২০১৬, বার্টেল সম্যান ফাউন্ডেশনট্রান্সফরমেশন ইন ডেক্স ২০১৭-১৮, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট রুল অব ল ইনডেক্স ২০১৭-১৮, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড ২০১৭, ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্সইউনিটকান্ট্রি রিস্ক রেটিংস ২০১৭এবং ভ্যারাইটিস অফ ডেমোক্র্যাসি প্রজেক্ট ডাটাসেট ২০১৭এর রিপোর্ট।

শেখ মোহাম্মদ রতন / সমকালীন মুন্সীগঞ্জ / ০১৮১৮৩৩৬৮০৮ / ২২.০২.১৮