শেখ মোহাম্মদ রতন, জুয়েল রানা ও তুষার আহমেদ:-০৫-০২-১৯:
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) চেয়ারম্যান ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, সংবিধানে বলা আছে বিনাবিচারে কাউকে আটক রাখা যাবে না। কিন্তু আমাদের দেশে যে কারাগারগুলো আছে, সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ বন্দি বিনাবিচারে আটক রয়েছে। এমনিতে আমাদের কারাগারগুলোয় ধারণক্ষমতার তিন-চার গুণ বেশি বন্দি রয়েছে। কারাগারে বন্দিদের মধ্যে কেউ দোষী থাকতে পারে, অপরাধী থাকতে পারে, দুর্ধর্ষ অপরাধীও থাকতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও তাদের বিচার হয়নি।
সুলতানা কামাল বলেন, সংবিধানে বলা আছে বাকস্বাধীনতা কেউ হরণ করতে পারবে না। কিন্তু সম্প্রতি একটি নতুন আইন হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। এ আইনের মাধ্যমে আমাদের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে।
রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা এলাকায় অবস্থিত রণদা প্রসাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মানবাধিকার, সংবিধান ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সুলতানা কামাল বলেন, আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করছি। আমরা প্রায়ই দেখছি মানুষের মরদেহ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। কে এটা করছে না-করছে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। আদালতে গেলে আমরা বুঝতে পারবো, কারা করছে? কিন্তু
আমাদের মানবাধিকারের জায়গা থেকে প্রশ্ন, কে করছে না-করছে সেটা বড় কথা নয়। যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলোর কোনও সুরাহা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে অনেক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় না। ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় থাকতে থাকতে একটা পর্যায়ে তারা আর ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করে না।
বাংলাদেশের দুর্নীতির সূচক সম্পর্কে টিআইবির চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছেন। কিন্তু দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশ খুব খারাপ জায়গায় রয়েছে। একটি তথ্য সবার জানা উচিত, দুর্নীতির যে স্কোর রয়েছে সেখানে ১০০-এর মধ্যে যদি ৪৩ না পাই ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে পারব না, দুর্নীতি প্রতিরোধে ভালো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পেরেছি। কিন্তু আমরা ২৫-২৬ উঠলেই বলি, ভালো করেছি, আবার ২৬-২৮ উঠলেই বলি, অনেক ভালো করেছি। নিঃসন্দেহে এটি ভালো। কিন্তু এর মানে এই না, দুর্নীতিতে আমরা ভালো করছি।
সুলতানা কামাল বলেন, বাংলাদেশে বৈষম্য বিলোপ আইন না থাকার কারণে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু, নারী-পুরুষ, আদিবাসী-বাঙালি বৈষম্যে বাড়ছে। দেশে দলিত গোষ্ঠীর মানুষ যেভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তা কোনও সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের দেশে বৈষম্য বিলোপ আইন তৈরি করার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। আইনটি আইন মন্ত্রণালয়েও গিয়েছিল। কিন্তু তারপর আর এগোয়নি। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের আইনপ্রণেতারা এখন পর্যন্ত এ আইনটি পাস করেননি।
রণদা প্রসাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের আয়োজনে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন– বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাজীব প্রসাদ সাহা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডর উপদেষ্টা সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক ড. মনীন্দ্র কুমার রায়। এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীমতি সাহা, শম্পা সাহা প্রমুখ।