শেখ মোহাম্মদ রতন, সমকালীন মুন্সীগঞ্জ :
কল-কারখানার যুগে হাজার বছরের পাটির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন মুন্সীগঞ্জের পাটি শ্রমিকরা। পাটি উৎপাদনের অন্যতম অঞ্চল হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জ।
গ্রীষ্ম মৌসুমে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই পাটির চাহিদা বাড়তে থাকে।
জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আবদুল্লাপুর আখড়া বাজারে প্রতি রোববার পাটির হাট বসে।
জেলার সর্ববৃহৎ হাট এটি।
এখানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা পাটি কিনতে আসেন।
এই হাটে পাটি বেচা হয় ভোর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
প্রতি হাটবারে লক্ষাধিক টাকার পাটি বেচা হয় এখানে। হাটে বিভিন্ন ধরনের পাটি পাওয়া যায়, যেমন শীতলপাটি, নকশিপাটি ও সাধারণ পাটি।
শীতলপাটির দাম সাধারণ পাটির চেয়ে প্রায় তিনগুণ।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি ও সিরাজদিখান উপজেলার কয়েকটি গ্রামে পাটি তৈরি করে থাকে বেশ কয়েকটি পরিবার।
সদর উপজেলার সুয়াপাড়া, টঙ্গীবাড়ির পাইকপাড়া, বাঘিয়া ও কামাড়খাড়া ও সিরাজদিখানের ভাটিমভোগ, বয়রাগাদি, তালতলার পাশের আরমহল গ্রামে পাটি তৈরির ঐতিহ্য অব্যাহত রয়েছে।
যদিও কালের পরিক্রমায় সুতা তৈরির কলকারাখানার দাপটে অনেকে পাটি তৈরির পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আবদুল্লাপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের পাইট্টাল বাড়ি এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ পাটি উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত।
পাইটাল বাড়ির ঐতিহ্য কয়েকশ বছরের।
বংশপরম্পরায় চারশ বছর ধরে তারা পাটি উৎপাদন করছে।
এখানে বর্তমানে রয়েছে ৬০ থেকে ৭০টি পরিবার।
সরেজমিনে জানা গেছে, একটি চার বাই পাঁচ হাত সাধারণ পাটি তৈরি করতে খরচ হয় ৩০০ টাকা।
এ পাটি বেচা হয় ৪১৫ টাকায়।
মূত্রা গাছ থেকে পাটি তৈরি করা হয়।
মূত্রা গাছ থেকে পাওয়া যায় বেতি, আতি ও বুকা।
বেতি থেকে পাটি তৈরি করা হয়।
আর আতি ব্যবহার হয় পান বিড়িসহ বিভিন্ন ধরনের মুদি সদাই বাঁধার কাজে।
বুকা লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এ মূত্রা গাছ আনা হয় সিলেট বিভাগের গারালঘাট অঞ্চল থেকে।
মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়ও পাওয়া যায় মূত্রা।
পাটি সাধারণত চার মাপের হয়ে থাকে।
চার বাই পাঁচ হাত, সাড়ে তিন বাই সাড়ে চার হাত, তিন বাই পাঁচ হাত ও সাড়ে তিন বাই আড়াই হাত মাপের পাটি প্রস্তুত করা হয়।
শীতলপাটি সাধারণত অর্ডার পেলে বানানো হয়।
একটি শীতলপাটি তৈরি করতে কমপক্ষে ৮০০ টাকা খরচ হয়। বেচা হয় এক থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়।
সাধারণত এক হাজার টাকা মণ দরে বেচা হয়।
পাইটাল বাড়ির পাটি প্রস্তুতকারীরা বলেন, আগের চেয়ে এখন পাটি দাম ও চাহিদা ভালো। তবে সরকারিভাবে ঋণ সহায়তা পেলে এর উন্নয়ন ঘটবে এবং জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
শেখ মোহাম্মদ রতন / ০১৮১৮৩৩৬৮০৮ / ০৪ -০৪-১৮ / সমকালীন মুন্সীগঞ্জ