শেখ মোহাম্মদ রতন ও জুয়েল রানা, সমকালীন মুন্সীগঞ্জ:-১২-০৩-১৯:
মুন্সীগঞ্জে এখন আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। এবার মুন্সীগঞ্জে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে কৃষকরা আলু উত্তোলন শুরু করেছেন। কৃষককুল আলু তোলায় বেজায় ব্যস্ত মাঠে। সারি সারি আলু তোলার পর বস্তাবন্দি করা থেকে শুরু করে কোল্ড ষ্টোরেজ কিংবা বাজারজাত করনে আলু চাষীদের চারপাশে তাকানোর ফুসরত নেই।
তবে গত ৪ বছরে লোকসানের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়া কৃষকরা এখন প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
গত চার বছরে আলুর ফলন ভালো হলেও বস্তাপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লোকসান হওয়ায় এবার লাভের মুখ দেখবেন কিনা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
এবার মুন্সীগঞ্জে আলুর ফলন ভালো হবার কারণে কৃষকের চোখে-মুখে খুশির জোয়ার লাগলেও গত চার বছর আলুতে লোকসান হবার কারণে। কৃষকের মুখে ফুটে উঠা হাসির ঝিলিক ফিকে হয়ে মলিনতায় রুপ নিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এবার মুন্সীগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ার এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মুন্সীগঞ্জে এবার আলুর বাম্পার ফলনে কৃষকের চোখে স্বপ্নের হাতছানি দিচ্ছে ওই গোল আলু। মার্চের শুরু থেকে মুন্সীগঞ্জ সদর সহ জেলার ৬ টি উপজেলা জুড়ে আলু তোলার মহোৎসব শুরু হয়েছে। কৃষকের সঙ্গে আলু তোলার কাজে কৃষানী ও শিশুরাও নেমে পড়েছে মাঠে।
এবার আলুতে গত চার বছরের লোকসান পুষিয়ে বেশ লাভবান হবেন কৃষকরা-এমন আশায় বুকে বেঁধেছেন জেলার হাজারো আলু-চাষী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবির জানান, এবার চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার চরাঞ্চলসহ ৬ উপজেলায় ৩৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত বছর আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি।
জেলায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টন আলু বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। জেলার ৭৪ টি হিমাগারে ধারণ ক্ষমতা ৫ লাখ মেট্রিক টন। বাকি আলু বিভিন্নভাবে সংরক্ষণসহ কম মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
গত ৪ বছর দেশের বিভিন্ন জেলায় আলু উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের আলু ব্যবসায়ীরা বস্তাপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লোকসানের শিকার হয়েছেন।
সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা সহ বিভিন্য উপজেলার মাঠে গিয়ে দেখা গেছে-কৃষককুল আলু তোলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
সদরের চরাঞ্চলের গ্রামে গ্রামে দিগন্ত জোড়া মাঠের পর মাঠ জুড়ে যেন গোল আলুর সমারোহ। চারপাশে যেদিকে দৃষ্টি পড়ে সর্বত্র শুধুই আলু আর আলুর দৃশ্য পলক চোখে পড়ে।
সরেজমিনে আরো দেখা গেছে- কৃষকরা মাঠের মাটি খুঁড়ে তুলে আনছে একেকটি আলু। আবার উত্তোলন শেষে মাঠেই আলুর স্তুপ করে রাখছেন। পরে এ আলু বস্তাবন্দি করে বিক্রির জন্য বাজারজাত করা হবে। আবার কেউ কেউ এখনই বস্তাবন্দি করে আলু সংরক্ষনের জন্য কোল্ডষ্টোরেজে নিয়ে যাবেন।
জেলা সদরের রামশিং গ্রামের চাষী মজিবুর রহমান জানান, আলু তোলার শুরুতেই আলুর ভালো না মন্দ বোঝা যাচ্ছে না।
এ আলু এখন চাষীর সোনালী স্বপ্ন পুরনের পথ দেখছে। জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ধামারন গ্রামের আলু চাষী আলম শেখ জানান, এবার আলুতে তারা লোকসান নয় লাভবানই হবেন।
আলু তোলায় কৃষককুল মাঠেই দিনরাত সময় অতিবাহিত করছে। রাতের ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে গেছে তাদের। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষককুল সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আলু উত্তোলনে। জেলায় ৭৮ হাজার কৃষক পরিবারের ৪ লাখ ৬৮ হাজার সদস্য কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত।
শ্রমিকদের মজুরি বৈষম্য-
সরেজমিনে ঘুরে অন্য জেলা থেকে আসা নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন আমাদের মজুরি দেওয়া হয় ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। কিন্তু স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা করে। শ্রমিকদের এই মজুরি বৈষম্যের এ বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, জেলার সিরাজদীখান, লৌহজং, শ্রীনগর, গজারিয়া, টঙ্গিবাড়ী ও সদরসহ ৬ উপজেলার প্রতিটি গ্রামেই আলু তোলার মহোৎসব চলছে। বিস্তির্ণ মাঠে কৃষকদের অবিরাম আলু তোলার দৃশ্য সত্যি অপূর্ব এক চিত্র।
সদর উপজেলার চরাঞ্চল আধারা ইউনিয়নের তাঁতীকান্দি গ্রামের আলু ব্যবসায়ী আক্তার মাহমুদ জানান, সবে আলু তোলা শুরু হয়েছে।
মার্চের পুরো মাস জুড়েই এ আলু তোলার মহোৎসবে মেতে থাকবে বলে আশা করছেন কৃষকরা।
আলু কেনার পাইকাররা ইতিমধ্যেই আলু সংগ্রহ করতে মাঠে ঘুড়তে দেখা গেলেও আলুর দর-দাম করে চলে যাচ্ছেন।
এ বছরও কি আলু বিক্রিতেও গত ৪ বছরের মতো লোকসান দিতে হবেকি-এই ভেবে কৃষকরা রাত্রি-দিনযাপন করছেন হতাশা ও দুশ্চিন্তায়।