মুন্সীগঞ্জে অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন নিয়ন্ত্রনের ‘গডফাদার’ পঞ্চসার ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা!

শেখ মোহাম্মদ রতন, সমকালীন মুন্সীগঞ্জ:-ধারাবাহিক রিপোর্টের পর্ব:-১ -চোখ রাখুন আসছে পর্ব:-২

মুন্সীগঞ্জের শহরের উপকন্ঠ পঞ্চসারের ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মেস্তফাসহ ক্ষমতাশীন দলের হস্তক্ষেপে গোটা জেলার শহর ও শহরতলীতে অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন ও মাদক বিক্রি বেড়েই চলেছে।

সম্প্রতি গেলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচণের পর থেকে পঞ্চসার ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মেস্তফার নেতৃত্বে জেলার পঞ্চসার ইউনিয়ন এখন অবৈধ কারেন্ট জাল তৈরীর কারখানা ও মাদকের হাটে পরিনত হয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাসহ পুলিশ প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর ও মুন্সীগঞ্জের নৌপুলিশকে ম্যানেজ করেই তারা এ অবৈধ কর্মকান্ড প্রকাশ্যে দিনে ও রাতের আধারে এসব করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে শহরের উপকন্ঠ পঞ্চসার ইনিয়নসহ বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার জাল তৈরির কারখানায় এসব অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদিত হয় এবং মুন্সীগঞ্জসহ সারাদেশে তা সরবরাহ করা হয়। জাল তৈরির কারখানার প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে জেলা মৎস্য অফিসের কাছে সঠিক কোনও হিসাবও নেই। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় তিন হাজার ছোট বড় কারখানায় এই অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদিত হয়। যেসব বড় কারখানা মনোফিলামেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ রেখেছে, তাদের কাছ থেকে মেশিন সংগ্রহ করে অন্যান্য অনেক ব্যক্তি নিজেদের ঘরে বসেই অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক কথায় বলা যায় পঞ্চসার ইউনিয়নসহ আশে পাশের প্রতিটি ঘরে ঘরে তৈরী হচ্ছে অবৈধ কারেন্ট জাল ও বিক্রি করা হচ্ছে মাদকদ্রব্য।

কিছু কিছু কারখানা অবৈধ কারেন্ট জাল বা মনোফিলামেন্ট উৎপাদন বাদ দিয়ে বৈধ মাল্টিফিলামেন্ট জাল উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে এই ব্যাপারেও স্পষ্ট করে কোনও তথ্য জানাতে পারেনি জেলা মৎস্য অফিস।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চসার ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা, ভিত্তিহিন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। আমি যে কারন্ট জাল উৎপাদন করি তা সম্পুর্ন সরকারের তথা মৎস্য অধিদপ্তরের নিয়মআনুযায়ী সঠিক মাপে উৎপাদন করে থাকি। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে আনিত মাদক ও অবৈধ কারেন্ট জাল তৈরীর অভিযোগ উঠেছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র চলছে।

এদিকে, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শামশুল বলেন, ‘অবৈধভাবে কারেন্ট জাল তৈরির কারখানাগুলোতে নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গত বছর কয়েক মাসে বিভিন্ন জাল কারখানায় অভিযান চালিয়ে কয়েক কোটি টাকার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয় এবং লাখ লাখ টাকার ওপরে জরিমানা করা হয়। তবে আমরা কাজটি পুরোপুরি শেষ করতে পারিনি। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে আমার একার পক্ষে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অভিযান পরিচালনা করতে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দও পাওয়া যায় না। এছাড়াও অন্যান্য গোপন কিছু সমস্যার কারণে অভিযান পরিচালনার কাজটি সম্ভব হয়নি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার নয়াগাও, পঞ্চসার, মুক্তারপুর এলাকায় অবস্থিত জাল কারখানাগুলো থেকে উৎপাদিত অবৈধ কারেন্ট জাল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। যদি কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ করা যেত তাহলে সারাদেশে নদ-নদীতে অভিযান পরিচালনা করার দরকার ছিল না।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও জানান, ‘কিছু কিছু কারখানা অবৈধ কারেন্ট জাল বা মনোফিলামেন্ট জাল উৎপাদন করতে শুরু করেছে। কিন্তু এরপরও প্রচুর পরিমাণে অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদিত হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি আগে যেসব কর্মচারী বড় বড় জাল কারখানায় কাজ করতো তাদের অনেকেই একটি দুইটি করে মেশিনের ব্যবস্থা করে ছোট ছোট কারখানা গড়ে তুলেছে এবং অবৈধ কারেন্ট জাল তৈরি করছে। এদের সংখ্যা কত হবে তার কোনও হিসাব নেই। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা জানতে পারি এরকম প্রায় দুই থেকে তিন হাজার জাল তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রতিদিন কী পরিমান জাল উৎপাদিত হচ্ছে তার হিসাব পাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’ আমরা ‘কারেন্ট জালের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স দেখিয়ে থাকি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শামশুল আরও জানান ‘৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত অবৈধভাবে মা ইলিশ আহরণের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান নিয়ে আমরা ব্যস্ত আছি। তাই জাল কারখানাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। তবে ২৯ অক্টোবর থেকেই আবার অবৈধভাবে কারেন্ট জাল উৎপাদনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

পঞ্চসার ইউনিয়ের চেয়ারম্যান মোস্তফার অবৈধ ক্ষমতাবলে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্য দিবালোকে জেলার হাট-বাজারে এখনো অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও মাদক দ্রব্য।

সম্প্রতি পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গোলাম মোস্তফা পাশ করার পর নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও মাদক দ্রব্য বিক্রির সিন্ডিকেট বেড়েই চলেছে। পঞ্চসার ইউনিয়ন থেকে শুরু করে এখন গোটা জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে অবৈধ কারেন্ট জাল তৈরী ও জেলার প্রতিটি শহর ও শহরতলীতে ছড়িয়ে পরেছে পঞ্চসার ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পরিনত হচ্ছে মাদক বিক্রির হাটে।

কেউ পঞ্চসার ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই তার বিরুদ্ধে চলে মামলা-হামলাসহ গুম-খুনের মতো ঘটনা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রভাবশালী চোরম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে পরতে হয়েছে হামলা-মামলার স্বীকারে। এমনকি অনেককে তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনি দিয়ে রাতের আধারে ধরে নিয়ে গিয়ে তার নিজ বাগান বাড়িতে ধরে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেধে মধ্যযুগিও কায়দায় বেদম প্রহার করার কথাও এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে দাড়িয়েছে।

এক কথায় পঞ্চসার ইউনিয়নে এখন গড ফাদার বনে গেছেন পঞ্চসার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।

এই কারেন্ট জাল দিয়ে মাছের পোনা নির্বিচারে ধ্বংস করছে এক শ্রেণীর অর্থলোভী অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীরা। পোনা মাছ ধরার বিরুদ্ধে রেডিও টিভিসহ সংবাদপত্রে প্রচারণা চালিয়ে সরকার যে অর্থ ব্যয় করছে তাতে অরণ্যেরোদন ছাড়া আর কিছু নয়। অবৈধভাবে কারেন্ট জালে ধরা পড়ছে ছোট ছোট সকল প্রকার মাছ। ফলে জাল ব্যবসায়ীদের ব্যবসা চলছে রমরমা। প্রকাশ্যে দিবালকে কারেন্ট জাল বিক্রয় হওয়ার পরও মৎস্য অধিদপ্তরগুলো রয়েছে নিশ্চুপ। তারা কোনা পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।

বিশেষ করে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ফ্রি স্টাইলে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধঘোষিত অবৈধ কারেন্ট জাল। সরকার ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার বা তদুপেক্ষা কম ব্যাস দৈর্ঘ্যে ও ফাঁস জালের (কারেন্ট জাল) নিষিদ্ধ ঘোষনা করলেও তা কোনো কাজে আসছে না। নিয়ম অনুযায়ী এ আইন অমান্যকারীকে ৫০০ টাকা জরিমানা বা ৬ মাসের জেল অথবা উভয় দন্ডে-দন্ডিত করার ঘোষণা রয়েছে, এ সকল আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে একশ্রেণীর অসাধু মৎস্য শিকারিরা অবাধে কারেন্ট জাল ব্যবহার করে শিকার করছে পোনা মাছ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে জেলা উপজেলার মিঠা পানির মাছ।

ঢাকার চক বাজার ও মুন্সীগঞ্জে রয়েছে কারেন্ট জাল তৈরির কারখানা। সেখান থেকে ৬শ’ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা পাউন্ডে কারেন্ট জাল ক্রয় করা যায়। সেগুলো বাড়িতে এনে জালের কাঠি ও সুতা লাগিয়ে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে । সাধারনত উপজেলা মৎস্য অফিসসহ প্রশাসনের লোকজনকে ম্যানেজ করেই এ কারেন্ট জাল বিক্রি করা হয়। সরকার যদি কারেন্ট জাল তৈরির কারখানা বন্ধ করে দেয় তাহলেই কারেন্ট জাল বিক্রি বন্ধ হবে নতুবা এভাবেই আমাদের মৎস্য স্মপদ একস্ময় বিলীন হয়ে যাবে আমাদেরই অসচেতনতায়।

নৈৗ পুলিশের পুলিশ সুপার (নারায়নগঞ্জ অঞ্চল)  মিনা মাহমুদা জানান, আমরা প্রতি বছর আমরা বিভিন্ন অবৈধ কারেন্ট জাল তৈরীর কারখানায় অভিযান চালিয়েছি। অভিযান চলাকালীন সময়ে আমরা আইনগত সব কিছু প্রয়োগ করবো। এখানে কে ক্ষমতাশিন দলের নেতা। কে চেয়ারম্যান আর কে মেম্বার তা দেখবো না। আইন তার নিজের গতিতেই চলবে। অবৈধ কারেন্ট জালের অভিযান অব্যাহত ছিল এবং অব্যাহত থাকবে। এতে পঞ্চসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান যতই ক্ষমতাশালীই হোক না কেন। আমরা সঠিক তথ্য প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ ও প্রশাসন) সুমন দেব জানান, অবৈধ কারেন্ট জাল ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। নিষিদ্ধ ঘোষিত মাদক দ্রব্য ও অবৈধ কারেন্ট জাল তৈরীর কারখানায় পুলিশ শুরুতেই অভিযান চালিয়ে তা প্রকাশ্যে আগুনে পুরিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। আমাদের সাথে কোষ্টগার্ড, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, নৌপুলিশ একত্রিত হয়ে কাজকরে যাচ্ছে। কারেন্ট জাল ও মাদকের মদদদাতা গড ফাদাররা যদি ক্ষমতাশালী জনপ্রতিনিধি যেই হোক হোক না কেনো তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ আল জোনায়েদ বলেন, ‘অবৈধভাবে যেন অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন করতে না পারেেএবং মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে। সবাই যদি সম্মিলিত ভাবে অবৈধ কারেন্ট জাল তৈরী ও মাদকের গডফাদারদের ভয় না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই তাহলেই এসব মানুষ নামের গডফাদারদের নির্মুল করা সম্ভব। আমাদের সবাইকে সেদিকেই জোর দিতে হবে। সঠিক তথ্য পেলে তাৎক্ষনিক অবৈধ কারেন্ট জাল কারখানাগুলোতে ও মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

 

বি:দৃ:-মুন্সীগঞ্জের আন্তঃজেলা মাদক ব্যবসায়ী, চুরি, ছিনতাই ও এলাকার
চাঁদাবাজসহ জেলার শির্ষ মাদক ব্যবসায়ীর নিউজ নাম-ঠিকানাসহ ধারাবাহিক ভাবে প্রচার করা হবে।

-সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন। পাশে থাকুন।
-তথ্য প্রদানকারির নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে।#

-ধন্যবাদ-
সম্পাদক ও প্রকাশক
শেখ মোহাম্মদ রতন
যোগাযোগ:-01818336808
                    01929933442