শেখ মোহাম্মদ রতন, জুয়েল রানা ও তুষার আহমেদ:-২৬-০১-১৯:
সড়ক অবকাঠামো ও সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার দূরবস্থার কারণে উন্নত জীবনমান থেকে বঞ্চিত রাজধানী ঢাকার কাছের জেলা মুন্সীগঞ্জ-৩ নির্বাচনি এলাকার জনগণ। গজারিয়ার মেঘনা ও ফুলদী নদীর উপর সেতু না থাকায় সম্পূর্ণ বিছিন্ন রয়েছে নদী বেষ্টিত গুরুত্বপূর্ণ গজারিয়া উপজেলা।
জেলা সদরের সঙ্গে গজারিয়া উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র বাহন হচ্ছে ট্রলার। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেঘনা ও ফুলদী নদী পার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ঘটছে ছোট, বড় দুর্ঘটনা। এছাড়াও মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ধলেশ্বরী নদী লাগোয়া কালিদাস নামে ছোট একটি নদী পৌরসভার চরকিশোরগঞ্জবাসীকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। নতুন সরকারের কাছে মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলার কয়েক লাখ জনগোষ্ঠির দাবি গজারিয়ার মেঘনা ও ফুলদী নদীর উপর এবং মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার কালিদাস নদীর উপর সেতু নির্মাণের।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের চরকিশোরগঞ্জ গ্রামের জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা অপূরণ রয়ে গেছে। শহরে আসার জন্য গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীকে নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। প্রথম শ্রেণীর কোন পৌরসভায় এমন দুর্দশা নিয়ে বসবাসকারী মানুষের চিত্র অকল্পনীয়। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোগী, শিক্ষার্থী ও নারী-পুরুষদের নৌকায় পারাপার হয়ে শহরমুখী হতে হয়। এ গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় তাদের উৎপাদিত শাক সবজি বাজারে আনতেও বেশ বেগ পেতে হয়। রাতে এলাকার কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সঠিক সময়ে হাসপাতালে আনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। সময় বেশি লাগার কারণে অনেক রোগীর অকালমৃত্যুও ঘটে।
শুস্ক মৌসুমে কালিদাস নদী পানি শূন্য হয়ে পড়ে। কিন্তু বর্ষা এলেই নদীটি যৌবন ফিরে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। এ গ্রামটিতে একটি মাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শহর থেকে নদী পর হয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন। মাধ্যমিক ও কলেজ এবং কিন্ডার গার্টেন পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থীদের শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে পড়াশুনা করতে হয়। নৌকা দিয়ে পারাপারের সময় তাদের প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। চরকিশোরগঞ্জ গ্রামবাসীর গ্যাস সুবিধাসহ কোন পৌর নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে।
গ্রামবাসীরা জানালেন, ধলেশ্বরীর শাখা নদী কালিদাস নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ হলে শহরের সঙ্গে তাদের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হবে। তবে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও তাদের সেতুর দাবিটি কোনো সরকারের আমলেই বাস্তবায়ন হয়নি। গ্রামবাসীর-এ নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘ বছরের। কিন্তু সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু নির্বাচন এলেই প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তা আর আলোরমুখ দেখে না।
এদিকে, মেঘনা ও ফুলদী নদীর উপর সেতু না থাকায় জেলা সদর থেকে যোগাযোগ বিছিন্ন হওয়ার কারণে সবচেয়ে অবহেলিত রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ গজারিয়া উপজেলা।
এমনকি গজারিয়া থানার পুলিশকে আসামি আনা-নেয়াও করতে হয় ট্রলারের মাধ্যমে। ধলেশ্বরী-মেঘনা নদী পথে ট্রলারে করে ২ উপজেলাবাসীকে আসা-যাওয়া করতে হয়। জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় জেলার অপর ৪টি উপজেলায়ও গজারিয়াবাসীর যোগাযোগে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে জেলা শহরের পূর্বাঞ্চলের গজারিয়াকে মেঘনা নদী বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এতে করে জেলার ৫টি উপজেলার সঙ্গে গজারিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরের হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকার বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গজারিয়ায় প্রবেশের জন্য ট্রলার বা ইঞ্জিনচালিত নৌকা যাত্রী পারাপার করে থাকে। মুন্সীগঞ্জ সদরে আসতে গজারিয়ার ইস্মানিরচর ও হোসেন্দি বাজার এলাকা থেকে ট্রলার ছাড়ে। কিন্তু বর্ষা এলে মেঘনা উত্তাল হয়ে পড়ে। সঙ্গে দেখা দেয় ঝড়ো হাওয়া।
এদিকে, গজারিয়া লঞ্চঘাট এলাকা থেকে সোনারগাঁ উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় দিয়ে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ইঞ্জিত চালিত নৌকা যাত্রী পারাপার করে। পরে অটোরিকশা ও স্কুটারযোগে জেলা শহরে পৌঁছেন যাত্রীরা। এতে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেঘনা পাড়ি দিতে হয়।
মেঘনা নদীতে মুন্সীগঞ্জ ও গজারিয়াবাসীর ফেরি ব্যবস্থা চালু করার দাবি থাকলেও তা দীর্ঘদিনেও কার্যকর হয়নি। নদীপথ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেকেই দীর্ঘ পথ অতিক্রম ও অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ হয়ে সড়ক পথে মুন্সীগঞ্জে আসা যাওয়া করে থাকেন। আবার, গজারিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে উপজেলার রসুলপুর এলাকার ফুলদী নদী। ফলে গজারিয়া উপজেলা সদর, থানা ও হাইওয়ে সড়কে যেতে ট্রলার দিয়ে পার হতে হয় গজারিয়ার জনগোষ্ঠীকে। এই ট্রলারযোগে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনা পারাপার হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
গত বছরের ৩ জুন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে গজারিয়ার মেঘনা নদীতে ফেরি সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর কয়েকদিন পরেই ফেরি সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাবাসী বন্ধ হওয়া ফেরি সার্ভিসটি পুনরায় চালু করার জন্য প্রধান মন্ত্রীর আসু হস্থক্ষেপ চাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ সদর থেকে গজারিয়ার উপজেলায় যাতায়াত করা বিভন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।