শেখ মোহাম্মদ রতন, জুয়েল রানা ও তুষার আহমেদ, সমকালীন মুন্সীগঞ্জ:-০৩-০২-১৯
মুন্সীগঞ্জ শহরে শিশুদের জন্য ছিলনা কোন বিনোদন কেন্দ্র। ছিলনা কোন পার্ক। স্বাস্থ-রক্ষায় প্রবীনদের হাটা-হাটি করতে হত প্রধান সড়কে। এ নিয়ে শহরের মানুষের মনে ছিল দীর্ঘদিনের আক্ষেপ। আধুনিক ডিসি পার্ক নির্মান হওয়ায় স্বাস্থ রক্ষায় হাটাচলার ব্যবস্থা হয়েছে। হয়েছে সব বয়সী মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা। সংস্কৃতিক চর্চায়ও যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। ফলে খুশি শহরের বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, ডিসি প্রার্কটি ৪১ শতাংশ জমির উপর নির্মান করা হয়েছে। বর্তমানে যে স্থানটিতে পার্ক নির্মান করা হয়েছে একসময় এটি মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ময়লার ভাগার হিসেবে ব্যবহার হত। স্থানীয়রা বিভিন্ন ছোট টং দোকান তুলে দখলে রেখেছিল। ২০১৭ সালের জুন মাসে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে পার্কের কাজ শুরু হয়। এর নকশা করে আর্সেল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। পার্কটি তৈরি করতে বিভিন্ন মালামাল ও আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করে, শাহ সিমেন্ট, যমুনা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। পার্কটিতে হাটার জন্য চর্তুর দিকে প্রায় ৬ ফুট চওয়াড়া একটি রাস্তা আছে। বসার জন্য বেঞ্চ। নির্মান করা হয়েছে ওয়াটার ফল, গ্যালারি সহ এমপি থিয়েটার, দাবার কোর্ট, ফুলবাগান, সোলার লাইট ও রবীন্দ্রনাথের যে সকল কবিতায় ফুলের নামে আছে সে সব কবিতা দিয়ে রবীন্দ্র কর্নার।
সরেজমিনে পার্কটিতে গিয়ে দেখা যায় লাল গোলাপ, নয়নতারা, জিনিয়া, অলকানন্দা, ডালিয়া, পপি ও গাঁদাসহ কমপক্ষে ১০ ধরনের ফুল ফুটে আছে। ভোর থেকেই পার্কের ভিতর শহরের বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণীপেশা ও বয়সের মানুষ প্রবেশ করছেন। এদের মধ্যে মধ্য বয়সী ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যাই বেশি ছিল। তবে তরুন ও যুবকদেরও উপস্থিতি ছিল। এদের সিংহভাগই হাটা-হাটি করতে এসে ছিলেন।
এ সময় মো.সুরুজ মিয়া নামের একজন ব্যাংকর্মকর্তা জানান, তাঁর পায়ে ব্যাথা আছে। তাই ডাক্তার নিয়মিত সকাল সন্ধা হাটা হাটি করতে বলেছেন। প্রায় তিন বছর যাবৎ ফযর নামাজ শেষ করে শহরের সুপার মার্কেট এলাকার মুল সড়কের একপাশে হাটা-হাটি করতেন। রাস্তায় ভোর থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত হাটা যেত। কোনদিন সকালে একটু দেড়ি হয়ে গেলে সে দিন আর হাটা যেতনা । ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হত। পার্কটি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন আর সময় দেখতে হয়না। যখন তখন শরীরের চাহিদা মত মনরোম পরিবেশে হাটতে পারছি।
জেলার ক্রীড়া সংগঠক আয়নাল হক স্বপন বলেন, মুন্সীগঞ্জ শহরে এত দিন কোন পার্ক ছিলনা। মানুষ চাইলেই দৌড়া দৌড়ি ও হাটাহাটি করতে পারতো না। বিশেষ করে যারা স্বাস্থ সচেতন অথবা ডায়াবেটিসের রোগী তাদের হাটাহাটি করতে খুব সমস্যা হত । ডিসিপার্ক নির্মাণ করায় সকাল সন্ধা নিজেদের ইচ্ছেমত শরীর স্বাস্থ রক্ষায় হাটাহটি করতে পারছেন তাঁরা। এমন সুন্দর ও দৃষ্টি নন্দন পার্কটি নির্মান করার জন্য জেলা প্রশাসক শায়লা ফারজানাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
হাটাহাটি করতে আসা সরকারি হরগঙ্গা কলেজের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলেন, তার বয়সের তুলনায় ওজন একটু বেশি। ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত হাটতে হয়। পার্কটি নির্মানের আগে খোলা রাস্তায় হাটতে গিয়ে বিরম্বনায় পড়তে হত। বৃষ্টির দিন একটু দেরি হলে রাস্তায় আর হাটার সময় পেতাম না । এছাড়াও শহরের সুপার মার্কেটে এলাকার ওই রাস্তায় কিছুদিন পরপর জনসভা, ওয়াজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। তখন রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হত। ডিসি পার্কটি নিমানের পর থেকে এখন ঝামেলা হীনভাবে মনের মত করে হাটতে পারছি।
প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক (চিত্রশিল্পি) আব্দুল আহাদ বলেন, আমাদের মুন্সীগঞ্জ শহরে দেখার মত তেমন কিছু ছিলনা। ডিসি পার্কটি নির্মান হওয়ায় বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে দেখা যায়, শহরের বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়ের শির্ক্ষাথীরা পার্কে আসছে। কেউ ঘুরে দেখছেন পার্কটি। কেউ কেউ বেঞ্চে বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন।
এ সময় কথা হয় কে কে গভ: ইনষ্টিটিউশনের ষষ্ট শ্রেনীর শিক্ষার্থী শেখ নিসার আহমেদ নীড় জানায়, আমাদের শহরে শিশুদের দেখার ও আনন্দ করার মত বিনোদন করার মতো তেমন কিছু ছিলনা। কোন বিশেষ দিনেও বিনোদনের কোন যায়গা ছিলনা। নদীর পারে ও সেতুতেই বেড়াতে যেতে হত। পার্কটি নির্মান হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন একবার এখানে চলে আসি।
স্থানীয়রা জানান, পার্কটি নির্মানের আগে এ যায়গায় রাতের অন্ধকারে মাদক বেচা-কেনা হত। পার্কটি নির্মান হওয়ায় এলাকায় মাদক বন্ধ হয়েছে। শহরের মানুষের জন্য বিনোদনের কেন্দ্র হয়েছে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের সভাপতি মুক্তি যুদ্ধা মতিউল ইসলাম হিরু বলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমি ছাড়া সংস্কৃতি চর্চার কোন যায়গা ছিলনা। বিনোদন কেন্দ্র ছিলনা। আমাদের শহরের সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াঙ্গন, বয়স্ক, যুবক, তরুন ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল একটা উন্মক্ত বিনোদন কেন্দ্র হওক। যেখানে মানুষ আনন্দ তৃপ্তি পাবে। সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করতে পারবে। ডিসি পার্কটি হওয়া মানুষের চাওয়া পূরণ হয়েছে। পার্কটিতে আধুনিক সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা হয়েছে। যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুফল বয়ে আনবে। এজন্য তিনি শহর বাসির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানান।
পার্কটি নির্মানের বিষয়ে জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বলেন, দেশের বাহিরে ও রাজধানীতে বয়স্ক নাগরিকদের জন্য উন্মক্তভাবে হাটা চলা করার পার্ক আছে। আমাদের জেলা সদরে তেমনটা নেই। এছাড়াও মুন্সীগঞ্জ জেলাটি ঢাকার কাছা-কাছি হওয়া সত্বেও এ শহরের মানুষের জন্য বিনোদন কেন্দ্র ছিলনা। যখন নির্মান কাজ শুরু করি, তখন পার্কটি শুধুমাত্র শিশু ও প্রবীনদের কথা মাথায় রেখে কাজ শুরু করি। পরবর্তীতে এ শহরের মানুষের বিনোদনের চাহিদা ও আধুনিক সংস্কৃতি চর্চার দিকে খেয়াল রেখে একটু ভিন্নভাবে পার্কটি নির্মান করি। গত ১২ জানুয়ারি পার্কটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বধোন করা হয়।